Header Ads Widget

র মৃত্যু দিবস


  আধুনিক ভারতের প্রতিষ্ঠাতা ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু দিবস আজ

                                         হাসানুজ্জামান

 

ইন্দিরা গান্ধী


বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্ক অনেক গভীরে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের সাথে ভারতের অবদানের কথা উল্লেখ করার মত। বিশেষ করে সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সহযোগিতা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে একটি অর্থপূর্ণ পরিপূর্ণতা দান করেছিল। ফলে বাংলাদেশ, ভারত এবং ইন্দিরা গান্ধীর পারস্পরিক সম্পর্ক একটি ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে। সেই ইতিহাসের প্রেক্ষাপট হচ্ছে সবুজে মিশানো লাল  রক্তের বাংলাদেশ। আজকের দিনে ৩১ শে অক্টোবর ভারতের সেই মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিজ দেহরক্ষির হাতে নিহত হয়। 


১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজদ্দৌলার পতনের মধ্যদিয়ে ভারতের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত  যায়। দীর্ঘ প্রায় ২ শত বছর ইংরেজরা এই ভারতবর্ষ শাসন করার মধ্যদিয়ে এক লুটপাটের ইতিহাস তৈরী করে। পরবর্তীতে এদেশের দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের ধারাবাহিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ইংরেজরা ভারত ছাড়তে বাধ্য হয়। ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনের অকুতোভয় সৈনিকদের মধ্যে ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর বাবা জহুরালাল নেহেরু। ইংরেজরা এদেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর জহুরালাল নেহেরু ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে। বাবা জহুরালাল নেহেরু উত্তরসুরি হিসাবে কন্যা ইন্দিরাগান্ধীকে বেছে নেয়। 

 

তার আগে ইন্দিরা গান্ধী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করে। সেখানে রয়েছে কবির নিজ হাতে গড়া প্রকৃতির মোহনীয় রুপের ক্যাম্পাস।  তারপর বাবার ইচ্ছায় উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করার লক্ষ্যে চলে যান অক্সফোর্ডের সামার ভিলেজ কলেজে। সেখানে পরিচয় হয় সহপাঠি রাজীবগান্ধীর সাথে। পরিচয় থেকে প্রেম এবং তারপর প্রণয়। এই বিয়েতে প্রথমের দিকে জহুরালাল নেহেরুসহ পরিবারের সম্মতি ছিল না।

 

কিন্তু ইন্দিরা গান্ধীর ব্যক্তিগত প্রবল আগ্রহের কারণে পরিবারের সকলেই বিয়েতে রাজী হতে  বাধ্য হয়। ১৯৪২ সালে বিয়ের পরেই বাবার ইচ্ছায় ইন্দিরা গান্ধী সরাসরি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে বাবার সাথে ইন্দিরা গান্ধীও জড়িয়ে পড়েন।  ১৯৫১ সালে বাবার দাপ্তরিক কাজ দেখাশোনার দায়িত্ব তার উপর অর্পিত হয়। বাবার মতই রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধীর বিচক্ষণতা , সততা, দূরদর্শিতা ভারতবাসীকে মুগ্ধ করে। ১৯৬৪ সালে বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের এই দেশপ্রেমিক জহুরালাল নেহেরুর মৃত্যু হলে লালবাহাদুর শাস্ত্রির মন্ত্রিসভায় ইন্দিরা গান্ধীকে তথ্য ও প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। 

 

এ সময় তার প্রশাসনিক দক্ষতা ও জনপ্রিয়তা দলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে। এই জনপ্রিয়তা দলকে সুসংগঠিত করতে সাহায্য করে। ১৯৬৬ সালে লালবাহাদুর শাস্ত্রির মৃত্যুর পর ইন্দিরা গান্ধীর উপর আসে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তার জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে আরো বৃদ্ধি পায়। ফলে ১৯৭১ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসে। ইন্দিরাগান্ধী দেশের দ্বিতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে।


এই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্বপাকিস্তানের আমজনতা স্বাধীনতার লক্ষে আন্দোলন করে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পাকিস্তান সরকার রাঁতের আঁধারে এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। নির্বাচারে হত্যা করে স্বাধীনতাকামী নিরীহ মানুষকে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তান সরকারের এই বর্বরোচিত পৈশাচিক ঘটনার শুধু নিন্দাই নয় বিপক্ষে অবস্থান নেয়। পূর্ব পাকিস্থানের স্বাধীনতাকামী মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়। 

 

পাকিস্থান সরকারের মিলিটারির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে প্রায় এক কোটি মানুষ আশ্রয় নেয় ভারতে। এই সব নির্যাতিত মানুষদের মধ্যের একটি অংশ যুদ্ধের ট্রেনিং নেয়। তারা দেশে ফিরে এসে পাকিস্থানী মিলিটারির বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ব্যক্তিগত সহযোগিতায় বাঙালি পাকিস্থানী মিলিটারের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াবার সাহস পায়। একদিকে মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই চালিয়ে যায় অপরদিকে ভারত বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে কুটনৈতিক প্রচেষ্ঠাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের মত একটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতার পিছনে ভারত তথা ব্যক্তি ইন্দিরাগান্ধীর সহযোগিতা ইতিহাসে স্বর্ণালক্ষরে লেখা থাকবে। 



ইন্দিরা গান্ধী একটানা দশ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় বিভিন্ন সেক্টরে প্রভ’ত উন্নতি সাধিত হয়। তার মধ্যে উল্লেযোগ্য হচ্ছে কৃষি। বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্যদিয়ে ইন্দিরা গান্ধীর সরকার কৃষিতে যে বিপ্লব ঘটান তাতে ভারতে দীর্ঘদিনের খাদ্য সংকট দূর হয়। অপরদিকে মাটির নীচে পারমানবিক বোমা বিস্ফোরণের মধ্যদিয়ে পারমানবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয় ভারত। কৃষি এবং সামরিক শক্তিতে বলিয়ান ভারতকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে ইন্দিরা গান্ধীর ব্যক্তিগত প্রচেষ্ঠা প্রশংসার দাবীদার। শুধু এই এশিয়া মহাদেশে নয় পৃথিবী জুড়েই গণতান্ত্রিক পারমানবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসাবে ভারত এখন সর্বজনবিদিত। 



১৯৮০ সালে আবারো ক্ষমতায় আসে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার। স্বর্ণমন্দির নিয়ে বিরোধের সৃষ্ঠি হয় সরকারের। স্বর্ণমন্দিরের অভ্যন্তরে অবস্থানকারি জঙ্গিদের হত্যা করা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এক শিখ দেহরক্ষি ১৯৮৪ সালের ৩১ শে অক্টোবর ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অকৃত্তিম বন্ধু ইন্দিরা গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করে।  এই হত্যা ইতিহাসে নির্মম ট্য্রাজিডি হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।



ভারতের চতুর্থ এবং প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।  একটি অসাম্প্রদায়িক , গণতান্ত্রিক এবং আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে মেধা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। রাজনীতিতে তার প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা তাকে করেছে মহান । বাংলাদেশের স্বাধীনতার পিছনে তার  অবদান  কখনো ছোট করে দেখার সূযোগ নেই।
 

 
 



 

 

 

 

 

 

 

নতুন প্রত্যাশায় ।। আকাশ বার্তা

 

 

 

 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ