আনারস পুষ্টিগুণে অতুলনীয়ল। সারা বছরই এ ফল পাওয়া যায়। তবে রসে ভরপুর ফলটি
বর্ষার ফল হিসেবেই পরিচিত। গ্রীষ্মে ফুল আর বর্ষায় ফল এবং পরিপক্বতা।
পৃথিবীর ৯০ শতাংশ আনারসের চাষ হয় হাওয়াই দ্বীপে। সেখানকার প্রায় সব আনারস
টিনবন্দী হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। আমাদের দেশে সর্বত্রই এ ফলের
দেখা মেলে। তবে সিলেট, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও টাঙ্গাইল জেলায়
এর প্রচুর চাষ হয়। আনারসের বৈজ্ঞানিক নাম আনানাস কোমোসাস, গোত্র
ব্রোমেলিয়াসি।
প্রতি ১০০ গ্রামে আনারসে পাওয়া যায় ৫০ কিলোক্যালরি শক্তি। এতে ভিটামিন-এ,
বি, সি, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ১০০ গ্রাম আনারসে ০.৬
ভাগ প্রোটিন, ০.১২ গ্রাম সহজপাচ্য ফ্যাট, ০.৫ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১৩.১২
গ্রাম শর্করা, ০.১১ গ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৪ মি. গ্রাম ভিটামিন-২,
ভিটামিন- সি ৪৭.৮ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০২ গ্রাম,
আঁশ ১.৪ গ্রাম এবং ১.২ মিলি গ্রাম লৌহ রয়েছে।
আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। যেগুলো শরীরের
কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। ফলে অথেরোস্ক্লেরোসিস, হার্ট রোগ, বাত
এবং বিভিন্ন ক্যান্সার থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়।
প্রচুর পরিমাণ ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে আনারসে। যা হাড় ও কানেক্টিভ টিস্যুকে করে
শক্তিশালী। এক কাপ আনারসের জুস আমাদের দৈনিক প্রয়োজনীয় ম্যাঙ্গানিজের ৭৩
ভাগ পূরণ করতে সক্ষম।
আনারস জ্বর ও জন্ডিস রোগের জন্য বেশ উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি, যা
আমাদের শক্তি জোগায়। গবেষণায় দেখা গেছে, আনারস গলা ব্যথা, সাইনোসাইটিসজাতীয়
অসুখগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে। হজমে সাহায্য করে। সঙ্গে শরীরের অন্য
অঙ্গগুলোকেও ভালো রাখে।
দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহয়তা করে আনারস। আবার আনারস
ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে কাজ করে। যে কোনো অসুস্থতার পরে মুখে রুচির জন্য আনারস
খাওয়া যেতে পারে।
আনারস খেলে ভালো থাকবে আপনার দাঁতের মাড়ি আর দাঁত দুটোই। আর ভুলে যাবেন না এতে আছে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম দাঁতের জন্য উপকারী।
প্রসঙ্গত, আনারসের আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল। পর্তুগিজরা ষোড়শ
শতাব্দীতে এটি এ দেশে নিয়ে আসে। আনারসের পাতা ২-৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা ও ২-৩
ইঞ্চি পর্যন্ত চওড়া হয়। পাতার দুই দিকের কিনারায় করাতের মতো কাঁটা। পাতা
দেখতে অনেকটা তলোয়ারের মতো। এর পাতাময় কাণ্ডের আগায় পুষ্পদণ্ড বের হয় এবং
ওই দণ্ডেই একটি মাত্র ফল হয়। ফলের গায়ে চোখের মতো অনেক চিহ্ন থাকে। ফল
কাঁচা অবস্থায় সবুজ আর পাকলে হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। কাঁচা ফল টক, পাকলে
অম্লমধুর।
আনারসের বীজে গাছ হয় না। আনারসের মাথায় একটি ও বোঁটায় চার দিকে কয়েকটি
চারাগাছ বের হয়। এগুলো দিয়ে বংশবৃদ্ধি ঘটে। আনারসের প্রধান জাত কিউ বা
জায়েন্ট কিউ। জলডুবি আনারস কুইন জাতের অন্তর্গত। এগুলো বেশ ছোট কিন্তু
রসালো। এ ছাড়া দেশীয় বেশ কিছু জাতের আনারস রয়েছে, যেগুলো ততটা মিষ্ট নয়।
আনারস দিয়ে জুস, চাটনি, মোরব্বা, জ্যাম, জেলি প্রভৃতি তৈরি করা হয়ে থাকে।
নতুন প্রত্যাশায় ।। আকাশ বার্তা
0 মন্তব্যসমূহ
আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি করার জন্য...ধন্যবাদ