Header Ads Widget

অশান্ত হয়ে উঠেছে শান্তিনিকেতন


                                           অশান্ত হয়ে উঠেছে শান্তিনিকেতন : উত্তরণের পথ কোনদিকে

                                                 হাসানুজ্জামান


 



বাঙালিদের তীর্থস্থান বলে পরিচিত ‘ শান্তিনিকেতন’ এখন অশান্ত হয়ে উঠেছে। পৌষমেলার নির্ধারিত স্থানে কর্তৃপক্ষের ইট-পাথরের সুরকি দিয়ে প্রাচীর দেয়াকে কেন্দ্র করে এই অশান্তির শুরু। স্থানীয়দের সাথে বিশ্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অর্থ্যাৎ শান্তিনিকেতন কৃর্তপক্ষের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে, পরস্পর বিরোধী মামলা হয়েছে।  এই ঘটনাকে ইস্যু করে রাজনৈতিক দলগুলো পক্ষে- বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় পরিস্থিতি এখন জটিল আকার ধারণ করেছে।


১৮৬৩ সালে নিভৃতে ঈশ্বরচিন্তা ও ধর্মালোচনার উদ্দেশ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কোলকাতা শহর থেকে ৯০ কিমি দূরে পশ্চিমবঙ্গের বীরভ’ম জেলার বোলপুরে  প্রথমে একটি আশ্রম ও শিক্ষাকেন্দ্র নির্মাণ করেন। তার নামকরণ করা হয় ‘ শান্তিনিকেতন’। অসাম্প্রদায়িক চেতনার আলো ছড়িয়ে দিতে ১৯০১ সালে পিতা-পুত্রের পরামর্শক্রমে স্থাপন করা হয় ব্রক্ষবিদ্যালয় যা কালক্রমে বিশ্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপ লাভ করে। ১৯১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সাহিত্যে  নোবেল পুরুষ্কার প্রাপ্ত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই শান্তিনিকেতনে ‘ বিশ্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে বাঙালির মৌলিক সাহিত্য-সংস্কৃতি র্চ্চার  একটি নতুন যুগের সূচনা করেন। যা ১৯৫১ সালে ভারতের কেন্দ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতিলাভ করে। 


কবির আমন্ত্রণে শানিনিকেতনে বেড়াতে আসেন আইনষ্ঠাইন, রঁমারঁলা,বিচারপতি স্যার মরিচ হাউসসহ সারাদুনিয়ার অনেক গুণি মানুষ। এই প্রতিষ্ঠানের কিছুদিনের জন্য শিক্ষার্থী ছিলেন ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রমতি ইন্দারা গান্ধী।


 
 বিশ্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অর্থ্যাৎ শান্তিনিকেতন কর্তৃপক্ষ পৌষমেলার স্থানে প্রাচীর র্নিমাণকে কেন্দ্র করে এখন জটিল সমস্যার মুখামুখি হয়েছে। বাঙালি সাহিত্য-সংস্কৃতির মুল চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে প্রতিবছরের শেষে অর্থ্যাৎ ডিসেম্বরে ‘শান্তিনিকেতনের’ প্রশস্ত বির্স্তীর্ণ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে পৌষমেলা। এই মেলায় লালনগীতি,ভাওউয়া,জারি, ভাটিয়ালি, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতিসহ বাঙালি নৃত্য পরিবেশন করে দুই বাংলার শিল্পীরা। যাত্রাপালা ও নাটক মজ্ঞস্থ হয়। ডিসেম্বরে শেষে অনুষ্ঠিত এই মেলায় গৃহস্থালি নানা রকম জিনিস  বিক্রি হয়। যে কারণে মেলাটি বিশ্বের শুধু বাংলা ভাষাভাষিদের কাছেই নয় অন্য সংস্কৃতের মানুষের কাছেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে মেলার সময় দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর দর্শকের সমাগম হয়।


 
মেলাটি  শান্তিনিকেতনের  প্রশস্ত ও বিস্তীর্ণ মাঠে অনুষ্ঠিত হয় বলে রবীন্দ্র প্রেমিকরা মেলার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাবনার পরশ স্পর্শ করতে পারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সব সময় শিক্ষাকে চারি দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে প্রকৃতির মাঝে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি কোলকাতা শহর থেকে ৯০ কিমি দূরের এই বোলপুরকে বেছে নিয়েছিলেন। কবির সেই প্রকৃতি নির্ভর বাঙালি সংস্কৃতি র্চ্চার আদর্শকে ভুলন্ঠিত করে পৌষমেলা চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রাচীর দেওয়ার চিন্তা  ভাবনা হলো কি করে। এ প্রশ্ন উঠেছে কোলকাতার বাঙালি বুদ্ধিজীবীসহ ,বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন, বর্তমান ছাত্র এবং রবীন্দ্র প্রেমিকদের মঝে।



গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে পরস্পর বিরোধী মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ৮ জন আন্দোলন কর্মী।  কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় অর্নিদৃষ্ঠকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা যার যার মত বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন একটি মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহণ করলেও সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোন প্রতিনিধি উপস্থিত হয়নি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিয়ে উদ্বেগ, উৎকন্ঠিত হয়ে পড়েছে দেশ- দেশের বাইরের অসংখ্য রবীন্দ্র প্রেমিকরা। কবি শঙ্খঘোষ,রুদ্র প্রসাদ সেনগুপ্ত, বিভাষক চক্রবর্তী, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়সহ ১৬ জন বাংলা সাহিত্যের পন্ডিত ব্যক্তি অনতিবিলম্বে শান্তিনিকেতন নিয়ে এই অনভিপ্রেত ঘটনার অবসান চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।


 


নতুন প্রত্যাশায় ।। আকাশ বার্তা

 

 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ